আমরা কম্পিউটার কেনার অনেক গুলো বিষয় ভাবতে শুরু করি যেমন ঃ কোন কোম্পানির মাদারবোর্ড নিবো, কোন কোম্পানির প্রসেসর কিনবো বা কত কোর প্রসেসর লাগাবো, কতটা র্যাম লাগাবো ইত্যাদি। তাছাড়া, যাদের একটু বাজেট কম তারা আবার একটু আলাদা চিন্তা করে যেমনঃ পুরাতন নেবো না কি নতুন নিবো বা পিসি রেডিমেট নিবো নাকি বানিয়ে নেবো। আসলে অনেক চিন্তা আমাদের মাঝে ঘুরপাক খেতে থাকে। আজকে এখানে কিছু নির্দেশনা থাকবে যা ফলো করলে পিসি বা ল্যাপটপ কেনা৷ সময় কোন চিন্তার প্রয়োজন পড়বে না। নির্দেশনা গুলো নিম্নরূপ
১) পিসি দিয়ে কি কি কাজ করবেন।
২) বাজেট ঠিক করা।
৩) পুরাতন পিসি বা ডেস্কটপ থেকে সাবধান।
৪) মাদারবোর্ড
৫) প্রসেসর বা cpu
৬) র্যাম(ram) এবং হার্ডিস্ক
৭) গ্রাপিস্ক কার্ড বা ssd কার্ড
৮) পাওয়ার সাপ্লাই এবং dvd রাইডার।
৯) মাউস, কিবোর্ড, মনিটর
১) পিসি দিয়ে কি কি কাজ করবেন।
যে পিসি বা ডেস্কটপ অথবা ল্যাপটপ কিনবেন সেটি দিয়ে আপনি কি কি কাজ করবেন। প্রথমে আপনাকে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে। কারন ফুটপাত বা দোকানে যেসকল পিসি দিয়ে মেমরিতে গান লোড করা হয় তার সাথে গ্রাফিস্কের কাজ করা বা ডিপ্লোপমেন্টের কাজ করা পিসির রাত দিন তফাত আছে। কারন একটি গান লোড করা পিসির কনফিগারেশনের সাথে একটি গ্রাফিস্কের কাজ করার ক্ষমতা থাকা পিসির অনেক পার্থক্য আছে।
সাধারনত একটি গান লোড করা পিসির র্যাম, প্রসেসর লো কনফিগারেশনের হলেও চলে কিন্তু গ্রাফিক্সের কাজ করা পিসির র্যাম, প্রসেসর, মাদারবোর্ড উন্নত কনফিগারেশনের হতে হবে তা না হলে কাজ করে শান্তি পাবেন না। বার বার হ্যাং করবে। আপনি যদি প্রচুর নেট ব্যাবহার, গ্রাফিক্সের কাজ, ভারি সফটওয়্যার ইনস্টল, গেম খেলা ইত্যাদি কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার পিসির মাদারবোর্ড ১০ হাজার টাকার উপরে থাকতে হবে। প্রসেসর ১৩-১৫ হাজারের কাছাকাছি থাকতে হবে। র্যাম থাকতে হবে ৪ জিবির উপরে একটি ssd কার্ড লাগানো থাকলে আরও মজা পাবেন।
আর যদি গান বা সাধারন কিছু কাজ যেমন ব্রাউজিং করা, ফটো ইডিটিং করা, ফটো স্কান করা, গান শোনা, মুভি দেখা ইত্যাদি কাজ করতে চান তাহলে ১৫০০ হাজারের মাঝে মোটামুটি ভালো পিসি বিল্ড করতে পারবেন। তাই পিসি বা ডেস্কটপ কেনার আগে, সেটা দিয়ে কি কি কাজ করবেন তা নিশ্চিত হতে হবে।
১) বাজেট ঠিক করা।
পিসি কেনার আগে সর্বপ্রথম আপনাকে বাজেট ঠিক করতে হবে। তা না হলো আপনি ঝামেলায় পড়বেন। আপনি যদি ঠিক না করেন তাহলে পিসি বিল্ট করার সময় যখন দোকানদার আপনাকে বলবে আপনার বাজেট কতো আর সেটা যদি ক্লিয়ার ভাবে বলতে না পারেন বা কথায় যদি কোন জড়তা রাখেন তাহলে তারা আপনার সরলতার সুযোগ নেবে। বলবে এই মাদারবোর্ডটা ভালো হবে বা ঐ প্রসেসর ভালো হবে ইত্যাদি।
এখানে একটি বিষয় হলো আপনি আগেই দোকানদারকে বলে দিতে পারেন, প্রসেসর,মাদারবোর্ড, র্যাম ইত্যাদি পার্টস গুলো কতটা উন্নত কনফিগারেশনের নিবেন। যেমনঃ আপনি যদি তাদের বলেন, প্রসেসর core-i5, Ram 8gb, motherboard asus, এবং Power supply 500w Atx, কথা বলেন তাহলে তারা সেই অনুসারে দাম বলে দেবে। এখানে উল্লেখ, আপনি যে মাদারবোর্ড নিবেন সেই মাদারবোর্ড যত জেনারেশনের ঠিক তত জেনারেশনে প্রসেসর লাগাতে হবে। তাই, আপনার সামথ্য অনুযায়ী বাজেট ফিক্সড করবেন।
৩) পুরাতন পিসি বা ডেস্কটপ থেকে সাবধান।
নতুনরা যারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনতে অনেক অগ্রহ প্রকাশ করেন তারা অধিকাংশই নতুন পিসির পরিবর্তে কম দামে এবং ভালো কনফিগারেশনের পুরাতন পিসি কিনতে চান। তাদের আমি বলবো একটু থামেন! আপনি আনন্দ বা সখের বসে যে পুরাতন পিসি কিনতে যাচ্ছেন সেটা কেনার পরে যদি আপনি পিসি বা ল্যাপটপ দিয়ে কাঙ্ক্ষিত কাজ করতে না পারেন তখন সেই আনন্দ এবং টাকা দুটোই নষ্ট এবং পিসি নিয়ে শুধু সার্ভিসিং সেন্টারে দৌড়াতে হবে।
যে পুরাতন পিসি বা ল্যাপটপ টা কিনতে যাচ্ছেন সেটার ভিতরের কনফিগারেশন সম্পর্কে ভালো ধারনা আছে আপনার? পুরাতন পিসির ভিতরে অনেক লো কোয়ালিটি পার্টস ভরে বিক্রি করা হয় এবং যখন তারা চেক করে দেয় তখন কোন সমস্যা ধরে পরে না কিন্তু কিছুদিন চালানোর পরে বিভিন্ন সমস্যা ফেস করতে হয়। বিক্রয় ডট কম বা ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের মত যে সাইট গুলোতে পিসি বিক্রি হয় তার অধিকাংশ পিসিতে মারাত্মক সমস্যা থাকে।
ওখানেও কিছু অসৎ ব্যাবসায়ী আছে তারা এমনটা করে থাকে। এই সাইট গুলোতে যে পিসির বিঙ্গাপন গুলো দেয়া হয় বা যারা এই বিঙ্গাপন গুলো দেয় তারা তাদের পিসি টি আসপাশের কোন লোকের কাছে বিক্রি করতে পারে নাই তাই তারা বিক্রি ডট কম এ দিয়েছে। আপনি কোন একটি জিনিস যদি বিক্রি করতে না পারেন আপনার বাসার আশেপাশে তাহলে কিন্তু বিক্রয় ডট কম এ দিবেন।
এই সাইট গুলোতে কিছু কিছু পিসি ভালো পাওয়া যায় কিন্তু এসকল পিসির এড দেয়ার সাথে সাথে এখানকার ব্যাবসায়ীরা কিনে নেয় এবং পরে চড়া দামে বিক্রি করে। যদি পুরাতন পিসি নিতেই হয় তাহলে বিক্রয় ডট কমের মত সাইটে আপনাকে অনেক সময় ধরে একটিভ থাকতে হবে। যেই কোন লোক পিসির এড দেবে তখনি তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং পিসি নেয়ার সময় ৪-৫ জনকে সাথে করে নিয়ে যাবেন যেন কোন প্রতারকের হাতে না পরতে হয়।
পিসি নেয়ার সময় ভালো করে অনেকক্ষণ চেক করে নিবেন। প্রয়োজন হলে ভারি কোন সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেখবেন হ্যাং করে কি না। যেমন free fire
.তাছাড়া, বন্ধ বান্ধবদের কাছ থেকে পিসি নিলে তো কো সমস্যাই নেই।
৪) মাদারবোর্ড
পিসির কাজের উপর নির্ভর করে মাদারবোর্ড কিনুন। এখানে আমি মাদারবোর্ড হিসাবে asus কে সাপোর্ট করবো। কারন asus কোম্পানির মাদারবোর্ড খুবই ভালো। কম্পিউটারে সাধারন কাজ করার জন্য কম বাজেটের মধ্যে h81 মাদারবোর্ডটি ব্যাবহার করতে পারেন। উন্নত কাজের জন্য h300 বা 400 অথবা axrox মাদারবোর্ড গুলো ব্যাবহার করতে পারেন। তাছাড়া, gigabyte, esonic, এগুলোও ভালো সার্ভিস দেয়।
৫) প্রসেসর বা cpu
আপনার কাজের গতি বাড়াতে অনেকটা সাহায্য করবে প্রসেসর বা cpu. কি ধরনের কাজ করবেন তার উপড় নির্ভর করে এবং মাদারবোর্ডের সাথে মিল রেখে প্রসেসর নিতে হবে। উন্নত কাজের জন্য core i5 এর উপরে নেয়ার চেষ্টা করবেন এবং সাধারন কাজের জন্য মিনিমাম core i3 ব্যাবহার করার পরামর্শ দিবো। pentium, Gold, ইত্যাদি কোয়ালিটি প্রসেসর পাওয়া যায়। এর মধ্যে pentium প্রসেসরের একটু দাম কম।
তাই, আমি সাজেক্ট করবো আপডেট জেনারেশনের একটি মাদারবোর্ডের সাথে pentium প্রসেসর ব্যাবহার করতে কারন এই প্রসেসরটির দাম কম। কিন্তু এর স্পিডও একটু কম। কিন্তু বাজেট কম থাকার কারনে এবং ভালো পিসি বিল্ড করার জন্য আপতত আপনি আপডেট জেনারেশনের মাদারবোর্ডের সাথে এই প্রসেসর ব্যাবহার করতে পারেন এবং পরে টাকা হলে হাই কোয়ালিটির cpu লাগিয়ে নেবেন।
৬) র্যাম(ram) এবং হার্ডিস্ক
উন্নত কাজের জন্য মিনিমাম ৮ জিবি র্যাম এবং সাধারন কাজের জন্য মিনিমাম ৪ জিবি র্যাম ব্যাবহার করলে ভালো হয়। হার্ডিস্ক ৫০০ অথবা ১০০০ যেকোন একটি ব্যাবহার করতে পারেন।
৭) গ্রাপিস্ক কার্ড বা ssd কার্ড
গ্রাফিক্সের কাজ করতে চাইলে গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে পারেন। ssd কার্ডে ইউন্ডজ দিলে কম্পিউটার ৫০% বেশি ফাস্ট হবে। এজন্য কম্পিউটার ফাস্ট করার একটি সেরা উপায় ssd কার্ড লাগানো। যাদের কম্পিউটার অনেক স্লো তারা ssd কার্ড লাগিযে নিতে পারেন। আপনার কম্পিউটার স্বাভাবিকের চেয়ে ২ গুন ফাস্ট হবে।
৮) পাওয়ার সাপ্লাই এবং dvd রাইডার।
পিসিতে যদি উন্নত কাজগুলো করতে চান বা আপনার পিসিতে যদি ssd, গ্রাপিস্ক কার্ড, ইত্যাদি ব্যাবহার করতে চান তাহলে মিনিমাম ৫০০w এর পাওয়ার সাপ্লাই ব্যাবহার করতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় asus এর একটি dvd লাগিয়ে নেবেন।
৯) মাউস, কিবোর্ড, মনিটর
মাউস, কিবোর্ড, এগুলো অর্জিনাল A4 tech এর নিবেন। তবে অন্য কোম্পানির পাওয়া যায় তবে বেশি সুবিধার না। খেয়াল রাখবেন A 4 tech এর এখন নকল পণ্য অসাধু ব্যবসায়িকরা বাজারো বের করেছে। ১৮” একটি ভালো কোয়ালিটির মনিটর নেবেন। সম্ভব হলে samsung বা Lg এর মনিটর নিতে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন এগুলোর নকল পণ্য বাজারে অনেক আছে। তাই, বিশ্বস্ত কোন শো রুম থেকে নিবেন।
তাছাড়াও, কিছু কমদামি চায়না মনিটর পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলো কিছুদিন পরে ডিসপ্লে সাদা হয় বা ডিসপ্লেতে দাগ পরে এবং কিছুদিনের মধ্যে অকেজো হয়ে পরে। তাছাড়া, লো কোয়ালিটির মনিটর গুলোতে গ্রাফিস্কের কাজ সঠিক ভাবে করতে পারবেন না কারন এগুলোতে কাজ করার সময় যে কালার দেখবেন পরে সেটা অন্য কোন ব্রান্ডের মনিটরের ডিসপ্লেতে অন্যরকম কালার দেখাবে।
পোস্টটি কেমন লাগলো কমেন্ট জানিয়ে দিন।
এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ।
0 Comments